ছবি : সংগৃহীত
দেশে আজ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সাহ্রি খাওয়ার পর শুক্রবার থেকে রোজা শুরু হবে। বাজারে ইতিমধ্যে রোজার কেনাবেচা শুরু হয়ে গেছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কেনাবেচা খুব বেশি নয়। কারণ, স্বল্প আয়ের মানুষ কষ্টে আছেন।
গত বছর পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দিন প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। এবারের রোজার ঠিক আগে সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১১৫ থেকে ১২০ টাকা দরে। মানে হলো, চিনির দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৩৭ থেকে ৪০ টাকা।
রোজার মাসে ইফতারে শরবত, জিলেপি ও অন্য খাবার তৈরিতে চিনি লাগেই। বরং অন্য মাসের চেয়ে বেশি লাগে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাবে, সাধারণত দেশে প্রতি মাসে গড়ে দেড় লাখ টন চিনির চাহিদা রয়েছে। রমজান মাসে লাগে তিন লাখ টন। চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার সাধারণ মানুষকে অনেকটা বাড়তি ব্যয় করতে হবে।
শুধু চিনি নয়, এবার রোজায় ব্যয় বাড়বে আটা, ময়দা, ছোলা, রসুন, শুকনা মরিচ, হলুদ, মাছ, মাংস ও ডিম কিনতে। রান্নার জন্য লবণ লাগবেই। সেটার দামও বেশি। ইফতারে একটি-দুটি খেজুর খাবেন, সেটার জন্যও বাড়তি বাজেট রাখতে হবে এবারের রোজায়। উল্লেখ্য, রোজার আগে গত এক সপ্তাহে বাজারে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। বাকিগুলোর বাড়েনি। তবে বাজার আগে থেকেই চড়া।
ব্রয়লার মুরগি, নিম্নবিত্তের প্রাণিজ আমিষের এই বড় উৎসটি এখন তাঁদের নাগালছাড়া। টিসিবির হিসাবে ব্রয়লার মুরগির কেজিপ্রতি দর উঠেছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায়, যা গত বছরের রমজানের চেয়ে ৫১ শতাংশ বেশি। ঢাকার কারওয়ান বাজার, মালিবাগ বাজার ও সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে গতকাল দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ডিমের দামেও স্বস্তির কোনো খবর নেই। ফার্মের মুরগির এক হালি ডিম কিনতে ব্যয় হবে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা, যা গত বছরের রমজান মাসের চেয়ে ৩৭ শতাংশ বেশি।
দেশে আজ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সাহ্রি খাওয়ার পর শুক্রবার থেকে রোজা শুরু হবে। বাজারে ইতিমধ্যে রোজার কেনাবেচা শুরু হয়ে গেছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কেনাবেচা খুব বেশি নয়। কারণ, স্বল্প আয়ের মানুষ কষ্টে আছেন।
সরকার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খোলাবাজারে বিক্রি (ওএমএস) কর্মসূচির আওতায় চাল ও আটা বিক্রি করছে। সেটা কিনতে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। অনেকে না কিনতে পেরে ফিরেও যান। সরকার এক কোটি পরিবারকে পরিবার বা ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে প্রতি মাসে ভর্তুকি মূল্যে দুই কেজি ডাল, এক কেজি চিনি ও দুই লিটার সয়াবিন তেল দেয়। রোজায় এক কেজি খেজুর (শুধু ঢাকায়) ও এক কেজি ছোলাও দেওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারের এই উদ্যোগ ভালো। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। আরও বেশি পরিবারের এই সহায়তা দরকার। কারণ, করোনাকালের আগের হিসাবেই দেশে এক কোটির মতো পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল। আরও এক কোটির মতো পরিবার দারিদ্র্যসীমার সামান্য ওপরে বাস করে। যেকোনো সংকটে তারা বিপাকে পড়ে যায়। আর পরিবার কার্ড বিতরণে নানা অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে।
বেসরকারি সংস্থা কেয়ার গত ফেব্রুয়ারিতে দরিদ্র মানুষের ওপর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাব কতটুকু, তা নিয়ে একটি জরিপ চালায়। দেশের উত্তর ও হাওরাঞ্চলের ৮টি জেলায় চালানো জরিপে দেখা যায়, ৮২ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে পারছেন না।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘এখন নিম্নবিত্ত ও মধ্যম আয়ের মানুষ খুব চাপে আছেন, অনেকে অত্যন্ত কষ্ট করে চলছেন। তাঁরা কোনো সহায়তাও পান না। আবার মুখ ফুটে বলতেও পারেন না।’ বাজারের এই অবস্থার জন্য বিশ্ববাজারকে নতুন করে দায়ী করার কিছু নেই। তদারকি ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতিও রয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের হাতিয়ারগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে না কেন? সাময়িক সময়ের জন্য ব্রয়লার মুরগি, ডিম ও গরুর মাংস আমদানির সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। অতীতে দাম নিয়ন্ত্রণে ডিম আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তখন দ্রুত দাম কমে যায়।