সংগৃহীত
গত শুক্রবার (৩০ শে আগস্ট) বিকেলে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার খাসেরচর গ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের শহীদ, আহত এবং সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দোয়ার মাহফিল অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম,কমিটি সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা, অনুষ্ঠানে উচ্চস্বরে গান বাজনাসহ গ্রামের বিভিন্ন বৈষম্য দূরীকরণে ১২ দফা প্রস্তাবনা পেশ করায় খাসেরচর গ্রামের এক পক্ষের কাছ থেকে হুমকি-ধামকির মুখে সমন্বয়কেরা।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সংগঠনের আয়োজনে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের জন্য দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে গ্রাম সংস্কারের এ প্রস্তাবনা পেশ করেন।
প্রস্তাবনাগুলো হলো-
১. মাদ্রাসাসহ সকল প্রতিষ্ঠানের কমিটি সংস্কার করতে হবে। বিশেষ করে প্রত্যেক পাড়া থেকে সৎ, যোগ্য, সাহসী ও মেধাবীদের নিয়ে সর্বজনগ্রহনযোগ্য কমিটি প্রদান করতে হবে। মাদ্রাসার বর্তমান কমিটির একাধিক ব্যক্তি ছাত্র তথা গণহত্যার সাথে পরোক্ষাকার জড়িত ছিলো। দেশের সকল ছোট বড় প্রতিষ্ঠানের মতো আমাদের এলাকার প্রতিষ্ঠান থেকেও তাদের অপসারণ জরুরি।
২. খাসেরচরের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের কমিটি এক কেন্দ্রীক না করে বিকেন্দীকরণ করতে হবে। এলাকার যেকোনো পাড়া থেকে যোগ্য লোক কমিটিতে যাবে।
৩. প্রতিটি পাড়ার সিনিয়র সিটিজেনগণ খাসেরচর শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় ভূমিকা রাখবেন।
৪. অন্যগ্রামের মানুষ আমাদের কাছে সম্মানের পাত্র, কিন্তু খাসেরচরের অভ্যান্তরীন কোন বিষয়ে তারা হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে যে বা যাহারা শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্টের জন্য তাদের জায়গা দিবে, তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করার পাশাপশি সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করতে হবে।
৫. এলাকার সকল যোগ্য লোককে এলাকার জন্য কাজ করার সুযোগ দিতে এবং বৈষম্য দূর করতে একই ব্যক্তি বা একই পরিবার একাধিক প্রতিষ্ঠানের কিংবা কমিটিরপ্রধানতম পোষ্টগুলোতে আসতে পারবে না
৬. সৎ, সাহসী ও মেধাবী তরুনদের নিয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে, যারা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করবে।
৭. মাদ্রাসার নামে থাকা বর্গাকৃত জমি ফেরত নিয়ে খেলার মাঠের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। অথবা এলাকার দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ছাত্র-যুবদের জন্য খেলার মাঠের ব্যবস্থা করবেন।
৮. প্রবাসীগণ দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান অবদানকারী। এলাকায় প্রবাসীরা ফিরলে যেকোনো কাজে তাদের সহযোগীতা নিতে হবে। যেকোন উদ্যোগে তাদের অংশগ্রহণের আহবান জানাতে হবে।
৯. প্রশাসনের সহযোগীতায় এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে মাদকের আখড়া ভেঙ্গে দিতে হবে। মাদকাসক্ত পুনর্বাসনের মাধ্যমে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে হবে।
১০. আর কৃষকরাই এই দেশের প্রাণ, সবার মুখের আহারদাতা। তাদের সবসময় সর্বোচ্চ সম্মান নিশ্চিত করতে হবে।
১১. বিয়ে, জন্মদিনসহ সামাজিক অনুষ্ঠানে উচ্চস্বরে বাদ্যযন্ত্র বাজানো নিষেধ এবং তা নিশ্চিতে সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
১২. সর্বোপরি, আজকে থেকে খাসেরচর সম্পূর্ণ বৈষম্যমুক্ত। আর কোনদিনও পাড়া, গোষ্ঠী ,ধর্ম, বর্ণ, মত-ভিন্নমত, ধনী-গরিব, শ্রমিক-মালিকের কোন বৈষম্য থাকবে না। সবাই এক। মানুষকে মানুষ হিসেবে তার সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে।
এসময় অতিথি হিসেবে মোঃ তোফায়েল আহমেদ, মোঃ মোখলেসুর রহমান, মোঃ শামসুল ইসলাম, মোহাম্মদ টিপু, সাইফুল ইসলাম ও মোঃ মাসুদ রানা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ইয়াসমিন খান লিটন, শামসুল ইসলাম সজল, খান মোহাম্মদ আশ্রাফ, রাজিব আহম্মেদ,খান মোহাম্মদ হৃদু, সাইদুর, সাজু, রায়হান, সোহান, সাজিদ, শাহরিয়ার,মেহেরাজ রায়হান উপস্থিত ছিলেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে শেষে সমন্বয়করা বাড়ি ফিরে গেলে তাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকির দিতে থাকে। তবে হুমকি-ধামকি যতই আসুক না কেন সমন্বয়করা তাদের দাবি আদায়ে অটুট থাকবে বলে মানিকগঞ্জ নিউজকে জানান।