ছবি : সংগৃহীত
মুরগি সফলভাবে পালন করার পাশাপাশি বার্ড ফ্লু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি হলো মুরগির ঘর বা ফার্মকে জীবাণুমুক্ত করা। মুরগির ঘর পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করার পর্যায়গুলো সব খামারির ভালো করে জেনে নেওয়া জরুরি।
পোল্ট্রির খামার করা বেশ লাভজনক পেশা- এটা এখন প্রমাণিত। তবে এটিকে লাভজনক করার প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো মুরগির ঘরকে জীবাণু ও রোগমুক্ত করা। মুরগির ঘর জীবাণুমুক্ত ও বাচ্চা তোলার পূর্বে অবশ্যই কিছু করতে করতে হবে। তা না হলে বাচ্চা মারা যাবে।
পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুরগি সফলভাবে পালন করার পাশাপাশি বার্ড ফ্লু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি হলো মুরগির ঘর বা ফার্মকে জীবাণুমুক্ত করা। মুরগির ঘর পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করার পর্যায়গুলো সব খামারির ভালো করে জেনে নেওয়া জরুরি।
মুরগি বিক্রি করার পর সমস্ত ঘরে ৫ থেকে ১০ ভাগ ফরমালিন স্প্রে করে লিটার ও অন্যান্য আবর্জনা বস্তায় ভরে ফার্ম থেকে দূরে নিয়ে গর্ত করে রেখে দিতে হবে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
খাবার পাত্র, পানির পাত্র, হোভার, চিকগার্ড ইত্যাদি ঘর থেকে বের করে প্রথমে ডিটারজেন্ট এবং পরে ওয়াশিং সোডা এবং এরপরে জীবাণুনাশক যেমন ভিরকন, জিপিসি-৮, টিমসেন, টিএইচ-৪ ইত্যাদি দিয়ে পরিষ্কার করে শুকনো জায়গায় রেখে দিতে হবে।
ঘরের মেঝে, দরজা, জানালা, সিলিং, নেট, ফ্যান ইত্যাদি প্রথমে শলার ঝাড়ু দিয়ে এবং পরে ডিটারজেন্টযুক্ত পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। মেঝেতে কোনো লিটার লেগে থাকলে তা ঘঁষে তুলে ফেলতে হবে।
পর্দা এবং অন্যান্য জিনিসপত্র প্রথমে ডিটারজেন্টযুক্ত পানি এবং পরে ওয়াশিং সোডা এবং পরে জীবাণুনাশক যেমন ভিরকন, জিপিসি-৮, টিমসেন, টিএইচ-৪ ইত্যাদি দিয়ে পরিষ্কার করে শুকনো জায়গায় রেখে দিতে হবে। ঘরের মেঝে, সিলিং, নেট ইত্যাদি ফ্লেমগান দিয়ে পোড়াতে হবে।
ঘরের মেঝে প্রথমে কস্টিক সোডা ১.২ গ্রাম প্রতি বর্গফুটে এবং পরে ওয়াশিং সোডা ৬ গ্রাম প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর পরিষ্কার করতে হবে। এবং পরে পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। ঘরের মেঝে জীবাণুনাশক যেমন ভিরকন, জিপিসি-৮, টিমসেন, টিএইচ-৪ ইত্যাদি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
ঘরের মেঝে পিলার (৩ফুট পর্যন্ত) দেয়াল এবং ঘরের চারপাশ (৩ ফুট পর্যন্ত) (৫০০ বর্গফুট জায়গার জন্যে) ১০০০ গ্রাম চুন, ২৫০ গ্রাম ব্লিচিং, ২৫০ গ্রাম ফরমালিন, ২০০ মিলি লিটার কেরোসিন, ২৫০ গ্রাম তুঁতে, ৫ লিটার পানি, ২৫০ গ্রাম ফরমালিনের উপাদানগুলো দিয়ে লেপে দিতে হবে।
ঘরের চারপাশে ৪ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত এবং ফার্মের প্রবেশ পথে চুন ছিটিয়ে দিতে হবে। ঘরের ভেতর তুষ রেখে ফরমালিন ও পানি (৯লিটার পানি ও এক লিটার ফরমালিন) মিশিয়ে তুষের ভেতর স্প্রে করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
ফিউমিগেশন পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। ফিউমিগেশন উপকরণসমূহ হলো পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট, ফলামালিন ও মাটির পাত্র ৪ থেকে ৫টি। প্রতি ১০০ ঘনফুটের জন্য ৪০ গ্রাম পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট এবং ৮০ মিলি লিটার ফরমালিন। ফরমালিন পটাশিয়াম পারম্যাংগানেটের দ্বিগুণ দিতে হবে। তবে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের ভেতর ঢালতে হবে, ফরমালিনের ভেতর পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট ঢালা যাবে না।
যেহেতু আমাদের দেশের অধিকাংশ ফার্ম ফিউমিগেশনের উপযুক্ত নয় এবং বর্তমানে পটাশের দাম বেশি তাই ফিউমিগেশনের পরিবর্তে ফরমালিন দ্বারা স্প্রে করে ঘর জীবাণুমুক্ত করা যায়।
সে ক্ষেত্রে ঘরের ভেতর খাবার পাত্র, পানির পাত্র, হোভার, চিকগার্ড ইত্যাদি রেখে এবং ঘরের চারপাশে পর্দা টানিয়ে ফরমালিন ও পানি (৫ লিটার পানি ও ১ লিটার ফরমালিন হিসেবে) মিশিয়ে ঘরের ভেতর সমস্ত জায়গা (মেঝে, পর্দা, সিলিং বা ছাদ) ভালোভাবে স্প্রে করে ২ থেকে ৩ দিন রেখে দিতে হবে।
বাচ্চা আনার ৩ দিন আগে ঘরের চারপাশের পর্দা উঠিয়ে দিতে হবে। মুরগির ঘর জীবাণুমুক্ত ও বাচ্চা তোলার পূর্বে অবশ্যই এসব বিষয়গুলো সম্পাদন করতে হবে তবেই বেশি লাভবান হওয়া যাবে। অন্যদিকে বাণিজ্যিকভাবে মুরগি উৎপাদন সম্ভব।